শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১১

আমার মনটা খুব খারাপ, খু-উ-ব............

অনেকদিন আগের কথা। নিশাত। ১০ বছরের ছোট্ট মায়াকাড়া এক মেয়ে। প্রথম যে দিন আমাদের কাছে আসলো ওর চাহনির মধ্যে অজস্র যন্ত্রনা যেন দেখতে পেয়েছিলাম, এক মাস ধরে সে কোমরের ব্যথায় হাটতে পারছিল না। আমরা নিশাতকে আমদের ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে নিলাম।

আইসিইউ-তে রোগীর সাথে কেউ থাকতে পারেনা, নিশাতের সাথেও কেউ থাকতে পারলো না। নার্সরা ওকে মাতৃস্নেহে আগলে রাখতে চাইলো। ওর কচি নিষ্পাপ মন মানলো না।মাকে ছাড়া কিছুতেই কিছু খাবেনা। ছোট বাচ্চাদের আমি এমনিতেই সহজে বশীভূত করতে পারি, নিশাতকে পারলাম না। বকুনি দিলাম, ভয় দেখালাম। ফলাফল, আমাকে দেখলেই চোখ-মুখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে থাকতো।যখন রক্ত পরীক্ষার জন্য তুলতুলে নরম হাতটাকে ফুটা করা হতো, দু’চোখ বেয়ে যেন মুক্তোর দানা পড়তো। ওর সাথে মজা করে কথা বলতে লাগলাম, একতরফাভাবে। আস্তে আস্তে আমার সাথে সহজ হতে লাগলো.........।

একদিন সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত হলো নিশাতকে অপারেশন টেবিলে শোওয়াতে হবে।

ছোট্ট মেয়ের নরম শরীরে ধারালো ছুরির স্পর্শ লাগলো।দুইদিন শুধু আমার সাথে না, ওর মায়ের সাথেই কথা বললো না অভিমান করে।আমদের সিস্টার-রা খেলনা কিনে কিনে ওর বিছানা ভরিয়ে দিলো।মুখটা আবার হাসিতে ভরে উঠলো।সারা ওয়ার্ড মাতিয়ে রাখলো প্রাণবন্ত সজীবতায়। ধীরে ধীরে সে হাটা শুরু করলো, যেদিন সম্পূর্ণ একা একা হাটতে পারলো-মনে হলো এভারেষ্টের চূড়ায় সে উঠে গেছে, সমগ্র পৃথিবী তার পদানত। অবশেষে একদিন হাসপাতাল থেকে নিশাতের ছুটি হলো, গাড়িতে যখন যাচ্ছিল দূর থেকে ওর হাসি মাখা মুখ দেখতে পারছিলাম, আর মনে মনে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম ওকে যাতে হাসপাতালে আর দেখতে না হয়............।

(নিশাতের কোমরে ক্যান্সার হয়েছিলো, যা ছড়িয়ে পড়েছিলো আশেপাশের টিস্যুতে। আমরা ওকে অপারেশনের পর কেমো/রেডিওথেরাপীর পরামর্শ দিয়েছিলাম।)

গতকাল এক রোগী দেখার জন্য অনকোলজী(ক্যান্সার) বিভাগ থেকে রেফারেল আসলো। একপ্রান্তে শীর্ণ এক ১০ বছরের ছোট্ট মায়াকাড়া মেয়ে। চমকে উঠলাম—এ যে নিশাত! হাত উপরে তোলার শক্তি নেই, কথা বলার ইচ্ছা নেই।ক্যান্সার অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।আস্তে করে ওকে ডাকলাম।মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো, উজ্জ্ব্ল হয়ে উঠলো দু’টো চোখ, হাসিতে ভরে উঠলো মুখ.........।

আমার মনটা খুব খারাপ, খু-উ-ব।

কেওয়াইএএমসিএইচ,, ১৮/০৪/২০১১

সন্ধ্যা ৭ টা

৮টি মন্তব্য:

  1. সবাইকে যেতে হবে, কেউ আগে, কেউ পরে। এখন তার কি অবস্থা ?

    উত্তরমুছুন
  2. বর্তমান অবস্থা জানার অপেক্ষায় আছি....।

    উত্তরমুছুন
  3. বর্তমান অবস্থা জানান অপেক্ষায় রইলাম...............

    উত্তরমুছুন
  4. এখন পর্যন্ত চারটা কেমোথেরাপী দেওয়া হয়েছে। ব্যথা বেড়েছে, হাটতে একটু কষ্ট হয়।

    উত্তরমুছুন
  5. কেমোথেরাপী চলছে, সম্পূর্ণ সুস্থ হবার সম্ভাবনা খুব কম।
    ধন্যবাদ আপনাকে আমার ব্লগ দেখে যাবার জন্য।

    উত্তরমুছুন
  6. এখন পর্যন্ত চারটা কেমোথেরাপী দেওয়া হয়েছে। ব্যথা বেড়েছে, হাটতে একটু কষ্ট হয়। সম্পূর্ণ সুস্থ হবার সম্ভাবনা খুব কম।
    ধন্যবাদ আপনাকে আমার ব্লগ দেখে যাবার জন্য।

    উত্তরমুছুন
  7. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন