বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১১

শধুমাত্র "চতুর্মাত্রিক";-এর জন্যঃ আমার পঞ্চাশতম পোস্ট আর কিছু কথা

সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে চতুরে আজ আমার পঞ্চাশতম পোস্টের সময় এসে গেলো। কখনো ভাবি নি, এই আমি নিয়াজ, এত দ্রুত হাফ সেঞ্চুরীর মাইল ফলক ছুঁয়ে ফেলবো।

ব্লগিং-এ হাতে খড়ি আমার বেশী দিনের নয়। একদিন পেপারে মুক্তব্লগ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দেখে প্রথম ব্লগ হিসেবে মুক্তব্লগে রেজিস্ট্রেশন করি, কিন্তু পোস্ট আর দেওয়া হয় না। এক সময় পোস্ট দেওয়া শুরু হলো, অন্যের পোস্ট পড়াও শুরু করলাম। এমনিভাবেই একদিন, নাম মনে নেই, এক পোস্টে অনেকগুলো বাংলা ব্লগের নাম দেখে অলস মূহুর্তে দেখতে দেখতে কখন যেনো চতুর্মাত্রিকে চোখ আটকে গেলো, টেরই পেলাম না।

২০১১ এর ২৯শে এপ্রিল চতুরে আমার প্রথম পোস্ট দেওয়া হলো-“বিশেষ এক দিন……”- আমার বাবাকে নিয়ে লেখা, পিতার মৃত্যুর দিনের বর্ণনা নিয়ে সন্তানের লেখা! Morbid ধরনের লেখা দিয়েই শুরু হলো আমার চতুরে পথচলা। প্রথম মন্তব্যটা পেলাম মামুন হক ভাইয়ার কাছ হতে। তাঁর মন্তব্যে হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম নুশেরা আপু, প্রীতি রাহা আর জলাপুর অসাধারণ মন্তব্যে। চোখের জল বাধ মানলো না নাজমুল ভাইয়ের মন্তব্য পড়তে গিয়ে। আমার প্রথম পোস্টের এই পাঁচ মন্তব্যকারীকে আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাচ্ছি আজ।

মামুন হক ভাইয়াকে, অনেকদিন হলো, আগের মতো পাই না, নুশেরা আপু কোথায় যে হারিয়ে গেলেন, জানতেই পারলাম না। অদিতি কবির আপুকে পেতে না পেতেই কখন যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন, টেরই পেলাম না। অনীক ভাইয়ার মন্তব্যগুলো খুব ভালো লাগতো, ভালো লাগতো তার কবিতাগুলো। বহুদিন হলো তার দেখা পাই না। আরণ্যক ভাইয়া আর রোবোট ভাইয়াকে কালে ভদ্রে এখন দেখা যায়। তবু ভালো জলাপু, সুরঞ্জনা আপু, মেঘাপু-উনারা একেবারেই হারিয়ে যান নি। ব্লগে ঢুকে উনাদের নিক দেখলে মনটা খুব ভালো হয়ে যায়। যেমন ভালো হয়ে যায়, সাহাদাত উদরাজী ভাইয়ের রেসিপি দেখলে বা আমার পোস্টে মন্তব্য দেখলে। মানুষকে আপন করে নেবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা উনার আছে, আমার কাছে তাই মনে হয়।

একজন ডাক্তার হিসেবে ব্লগে অন্য কোনো ডাক্তার দেখলে খুবই ভালো লাগে। শব্দপুঞ্জের ধারাবাহিক উপন্যাসটা আমি ঠিক মতো পড়তে না পারলেও, আমার প্রতিটি পোস্টে ওর মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকতাম। যেমন থাকতাম আরিশের মন্তব্যের জন্যও। দুই জনই হয়তোবা খুব ব্যস্ত এখন, খুব একটা দেখি না, তাদের অনুপস্থিতি দেখে বুক থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে আসে। দারুচিনি লবঙ্গ আপু যে ডাক্তার, সে তথ্যটাই আমি জেনেছি অনেক পরে। আমার ব্লগে উনি খুব কমই আসেন, অপেক্ষায় থাকি আমি।

মাঝে একবার ধুমকেতুর মতো উদয় হলো আকাশগঙ্গা। সবাইকে মাতিয়ে দিয়ে সে নিজেই এখন অনিয়মিত। ছেলেটা বড্ড অভিমানী। কার প্রতি এতো অভিমান, পলাশ? আকাশগঙ্গার মতোই জুনাপুকে আর দেখা যায় না। এক সময় একুয়া রেজিয়া আপুর প্রাণবন্ত উপস্থিতি থাকলেও, এখন সেখানে শুধুই শূন্যতা। খুঁজে পাই না শাপলা আপুকে, ভেবে ভেবে বলি আপুকে। বাতিঘর ভাইয়াকে তবু মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। যেমন মাঝে মাঝে পাওয়া যায় তারার হাসি আপুকে আর জুলিয়ান সিদ্দীকি ভাইকে। উনাদের সব্বাইকে, সব্বাইকে খুব মিস করছি আমি। আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন-ফিরে আসুন এই নীড়ে, আমরা আছি আপনাদের অপেক্ষায়।

বাপী হাসান ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাকে খুব সুন্দর একটা নামে ডাকার জন্য-‘ডাকু’। নামটা সব সময় শোনার অপেক্ষায় থাকি, যেমন অপেক্ষায় থাকি আমীন শিমুল ভাইয়ার ন্যায়নিষ্ঠ মন্তব্যের জন্য। ভালো লাগে পাপতাড়ুয়া, আমিন, হালিম ভাই, মাহবুব আলী ভাই, মাতরিয়শকা, শাওন ভাই-এদের মন্তব্য এবং পোস্ট পড়তে। জোকস পড়তে চাইলে চলে যাই নয়ন ভাই আর ধৈবতের ব্লগে।অজানাকে জানতে চাইলে বা দেখতে চাইলে ছুটে চলে যাই মরুভূমির জলদস্যুর ব্লগে। এই চতুরেই পেয়েছি আব্দুস শাকুর স্যার আর সান্ত্বনা চ্যাটার্জীর মতো গুণীজনদের সাহচর্য। আরো অনেকেই আছেন, যাদের নাম হয়তোবা এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না, কিন্তু সব সময় তাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি।

নাঈফা চৌধুরী অনামিকা আপুর মমতাপূর্ণ মন্তব্যগুলো পড়ে শুধু আমিই না, আমার সহধর্মিনী লিসাও খুব মিস করেন উনাকে। দেশে থাকেন না, নতুবা কবে যে উনার বাসায় আমরা দু’জন হাজির হয়ে যেতাম! অনামিকা আপু, আপনি কিন্তু আমার সব লেখাতে কমেন্ট করেন না, যা আমি ভীষনভাবেই চাই। শুধুমাত্র একজনকেই আমি দেখি যিনি সব সময়ে আমাদের মতো এই নবীশ আর নবীন লেখকদের প্রতিটি লেখায় অসম্ভব দরদ দিয়ে মন্তব্য করেন এবং উৎসাহ দিয়ে যান। তিনি আর কেউ নন, আমাদের সবার প্রিয় আর শ্রদ্ধার পাত্র নাজমুল হুদা ভাই। বয়সে উনি আমার বাবার সমান, কিন্তু মনের টানে হয়ে গেছেন ভাই, বন্ধু।আমার এই বন্ধুটির একটি কাজ আমার খুবই ভালো লাগে, লেখার ভুল ধরিয়ে দেওয়া।

ডাক্তার হিসেবে আমার বেশিরভাগ লেখা হয়ে যায় রোগী সম্পর্কিত ট্রাজেডীমূলক লেখা, যেমন, আমার মনটা খুব খারাপ, খু-উ-ব............, একটি সাধারণ গল্প, নন্দিতা, এই লেখা তোমার জন্য......,আমি ‘বাবা’ ডাক শুনতে চাই......আমি ‘বাবা’ ডাকতে চাই, - আপনারা আমার অনুভূতিকে সম্মান দেখিয়েছেন, আমি খুব কৃতজ্ঞ। আমি গল্প তেমন লিখতে পারি না, তবুও, নিজের অজান্তেই কিছু গল্প নিজের কাছেই প্রিয় হয়ে গেছে, যেমন, এটি একটি গল্প, কোনো সত্যি কাহিনী নয়, অন্ধকার পথ, পিছনে বন্ধ দরজা । খুব ভালো লেগেছে যখন দেখেছি এই গল্পগুলো আপনাদেরও ভালো লেগেছে। মেডিকেল কলেজ জীবন নিয়ে যখন মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন..... লিখি, আপনাদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে এটাকে সিরিজ আকারে লিখে ফেলি, যেমনি লিখছি লিবিয়ার পথে পথে এবং ইতিহাসের পাতা থেকে। ইতিহাস নিয়ে গল্প নিজু হিবাকুশা লিখে আপনাদের ভালো লাগায় আমি খুব উৎসাহ পেয়েছি। বাবাকে নিয়ে অপুর ভাবনা, আদালত নামা আর মা দিবসে মাকে নিয়ে লেখা মা, আজ আমি ডাক্তার…-এ আপনাদের পরম মমতাপূর্ণ মন্তব্যে আমি আন্দোলিত হয়েছি। শিহরিত হয়েছি আমার ছবি ব্লগগুলোও আপনাদের ভালো লাগায়।চমকিত হয়েছি বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও মনের মানুষ নিয়ে লেখাটাতে আপনাদের আলোচনা করতে দেখে।

মন থেকে অংশ নিয়েছি বারোয়ারী লেখা ‘সরল রেখা-বক্র রেখায়’- লেখাটির একটি সফল পরিসমাপ্তির জন্য সেই আপনাদের কাছেই আমি দুই হাত জোড় করছি। মনে মনে ভীষন পুলকিত হয়েছি আমাকে নিয়ে আকাশগঙ্গার লেখা ‘ডাক্তার নিয়াজ, পলাশ (আকাশগঙ্গা), হাস্যময়ী এক রমনী আর নিষিদ্ধ কিছু কাহিনী!’-পড়ে। একুয়া রেজিয়ার ‘মেঘ হলে মন আর শ্রীকান্তের কিছু গান’, মামুন হকের ‘ভালোবাসতে আর ভালো লাগে না’, তানভীর আশিকের ছবি ব্লগ 'রঙ’, অন্ধ আগন্তুকের ‘অসাধারণ কিছু শর্টফিল্ম ( প্রতিটির এন্ডলাইনে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে ! )’, নেটপোকার ‘মধ্যযুগের মুসলিম সভ্যতার কালজয়ী নিদর্শন: ক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা’, সান্ত্বনা চ্যাটারের ‘বসুন্ধরার গান’, নুশেরা আপুর ‘গান-গল্পের চরিত্ররা’, অনীক ভাইয়ার ‘অহেতুক যা কিছু’, সুজন সুপান্থের ‘ও মা, তোমার আঁচলে বাইন্ধা রাখছি প্রাণ’-ইত্যাদি আরো অনেক লেখা পড়ে আমি হয়েছি বিমোহিত, সমৃদ্ধ হয়েছে আমার জ্ঞান ভান্ডার।

আমার আর কিছু বলার নেই, শুধু একটা কথাই বলতে চাই-আমি ভালোবাসার প্রচন্ড কাঙ্গাল এক ছেলে, আপনাদের কাছ হতে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা যেনো থাকে চিরদিন, অবিরত। সবাইকে (যাদের নাম লিখতে পেরেছি, আর যাদের নাম অনিচ্ছাকৃ্ত কারণে এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না) ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

1 টি মন্তব্য:

  1. আমিও আমার লেখা গুলো এই রকম একটা ব্লগ বানিয়ে রেখে দেই। ভাল ব্যবস্থা।
    ধন্যবাদ। ফ্লোয়ার হয়ে গেলাম।

    উত্তরমুছুন